রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন
Menu

আমি রূপকথার গল্পে থাকা আমাজনের সেই উষ্ণ-প্রস্রবণ দেখতে পেয়েছি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ :  March 20, 20222:11 pm

আমাজনের গহিন অরণ্যে এক রহস্যময় নদীর খোঁজ মিলেছেযে নদীর পানি টগবগ করে ফুটছেসেখানে পানির গড় তাপমাত্রা ৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসএই নদীর পানিতে জীবন্ত প্রাণী পুড়ে মারা পড়েরহস্যময় নদীর খোঁজ পেয়েছেন আন্দ্রেজ রুজো২০১৪ সালে টেডএক্স-এর এক বক্তৃতায় নদী নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা গবেষণালব্ধ প্রায় সমস্ত তথ্য তুলে ধরেনআন্দ্রেজ রুজো হলেন পেরুর ভূবিজ্ঞানীতিনি বলেন, ‘আমাজনে কোনো আগ্নেয়গিরি নেইপেরুর বেশির ভাগ অংশেও নেইযে স্থানটিতে এই ফুটন্ত নদী রয়েছে তা নিকটতম আগ্নেয়গিরির কেন্দ্র থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে

সত্যি বলতে কী, আমি রূপকথার গল্পে থাকা আমাজনের সেই উষ্ণ-প্রস্রবণ দেখতে পেয়েছি। আমি দূর থেকে নদীটির মৃদু তরঙ্গ শুনতে পেয়েছিলাম। যা কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল। অনেকটা সমুদ্রের ঢেউয়ের ক্রমাগত আছড়ে পড়ার শব্দের মতো শোনাচ্ছিল। এরপর যত কাছে গিয়েছি গাছের মধ্য দিয়ে তত ধোঁয়া ও বাষ্প উঠে আসতে দেখেছি। অতঃপর আমি এই ফুটন্ত নদী দেখতে পেলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে পানিতে থার্মোমিটার ধরলাম এবং গড় তাপমাত্রা ছিল ৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। নদীটি গরম ছিল এবং দ্রুত প্রবাহিত হচ্ছিল।’ এই নদীকে অনুসরণ করে আন্দ্রেজ রুজো কিছুদূর পর্যন্ত বারবার এগিয়ে গিয়ে আবার পিছিয়ে আসছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, বিস্তারিত অভিজ্ঞতা নেওয়া। এই নদীতে তিনি একটা অদ্ভুত বিষয়ও লক্ষ্য করেছেন। তা হলো—নদীর পবিত্র স্থান শামানের আখড়া থেকে ঠান্ডা স্রোতের প্রবাহ রয়েছে। আন্দ্রেজ রুজো বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই প্রথম বহিরাগত ছিলাম না, যে নদীটি দেখেছি। এটা শামানদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা এ নদীর পানি পান করে। এর বাষ্প গ্রহণ করে। রান্নার কাজে ব্যবহার করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সারে। এমনকি নদীর পানি দিয়ে ওষুধও তৈরি করে।’ আন্দ্রেজ রুজো আরো বলেন, ‘নদীর ধারের তাপমাত্রা মাপ করেছি। সেখানে এর ফলাফল ছিল অবাক করার মতো। শুরুতে নদী ঠান্ডা হতে শুরু করছে—তারপরে উত্তপ্ত হয়ে আবার ঠান্ডা হচ্ছে। আবার উত্তপ্ত হয়ে আবার ঠান্ডা হচ্ছে, আবার উত্তপ্ত হচ্ছে এবং যতক্ষণ না ঠান্ডা পানির নদীতে গিয়ে মিশছে।’

আন্দ্রেজ রুজো এই নদীতে বিভিন্ন প্রাণীকে মরে পড়ে থাকতেও দেখেছেন। এটা তাকে অবাক করেছে। প্রাণীগুলো যখন নদীর পানিতে পড়ে, প্রথমেই প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানিতে প্রাণীর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখ খুব তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায়। এরা সাঁতরে পার হওয়ার চেষ্টা করতেই থাকে, কিন্তু ধীরে ধীরে এদের পেশি ও হার সেদ্ধ হতে শুরু করে। উত্তপ্ত পানি প্রাণীর মুখে গিয়ে ভেতর থেকে সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে একসময়, তারপর এগুলো শক্তি হারাতে থাকে। মারা যায় প্রাণীগুলো।