বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে পথ হারিয়ে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৩২ জেলে এক মাস পার হয়ে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি। ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক এই জেলে পরিবারগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। অর্থসংকটে পরিবারগুলো এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘এফভি সোনার মদিনা-২’ নামের মাছ ধরার ট্রলারের ৩২ জেলেকে ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করে। আটক জেলেরা সবাই উপজেলার শিলকূপ ইউনিয়নের জেলেপল্লির বাসিন্দা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী উপজেলার বাংলাবাজার ঘাট থেকে একদল জেলে ওই ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান। একপর্যায়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি সাগরে ঘন কুয়াশার কারণে পথ হারিয়ে ট্রলারটি ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে ওই সময় ভারতীয় কোস্টগার্ড ট্রলারটি জব্দ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী বোট মালিক সমিতি ও ওই ট্রলারের মালিক নুরুল আবছার বাঁশখালী থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রলার আটকের পর ৩৩ দিন পার হলেও জেলেরা ফিরতে না পারায় পরিবারগুলো অর্থসংকটে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁশখালীর শিলকূপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হেডপাড়া গ্রামে গিয়ে জেলে পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা হয়। ওই ট্রলারের জেলে দিদারুলের মা রেহেনা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে ও এক ভাই ভারতে আটকে আছে। পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগও হয়নি। পরিবারের সবাই এখন দুশ্চিন্তায় আছে। মোহাম্মদ আলী বলেন, তাঁর দুই ছেলে ওই ট্রলারে ছিল। ছেলেদের ফেরত আনার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন। ট্রলারের মালিক নুরুল আবছার বলেন, ‘ওইদিন মুঠোফোনে জানতে পারি, আমার লোকজন আটকা পড়েছে। এ ঘটনায় আমি জিডি করেছি। আমি তাঁদের ফেরত পেতে সরকারের সহায়তা চাই।’ জানতে চাইলে শিলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আটক জেলেদের ফেরত আনতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো কোনো সমাধান মেলেনি।
ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ভারতে আটক জেলেদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ওই ৩২ জেলে পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।