বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) প্রবেশপদ অর্থাৎ ১৫তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এর মাধ্যমে সহকারী জজ পদে নিয়োগ পাবেন ১০০ জন। অনলাইনে আবেদনের শেষ তারিখ ১২ জুন ২০২২। এই বিজিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ নিয়ে লিখেছেন চতুর্দশ জুডিশিয়ারি সহকারী জজ (সুপারিশপ্রাপ্ত) রকিবুল হাসান শান্ত
১. বিগত ১২টি বিজেএস প্রিলিমিনারি, সব অ্যাডভোকেটশিপ এবং বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্ন পড়ে ফেলুন। পড়ার সময় লক্ষ করুন—কোন ধরনের প্রশ্ন সাধারণত বেশি আসে ও রিপিট হয়।
২. প্রতিদিন একটি করে ১০০ নম্বরের পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট দিন। একই প্রশ্ন বারবার দাগাতে দাগাতে দেখবেন মুখস্থ হয়ে গেছে, যা প্রিলিমিনারিতে অন্তত ৫০ নম্বর তুলতে সাহায্য করবে।
৩. সাধারণ জ্ঞানের সাম্প্রতিক প্রশ্ন নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করে বেসিক ইনফরমেশনগুলো পড়ে শেষ করুন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভালো ধারণা রাখুন। জব সলিউশন শেষ করতে পারলে খুবই ভালো। যদি সম্ভব না হয় তাহলে সাধারণ জ্ঞানের জন্য ডাইজেস্ট বা এ ধরনের বই পড়তে পারেন।
৪. ইংরেজিতে এখন গ্রামারের পাশাপাশি লিটারেচার থেকেও কিছু প্রশ্ন আসে। তবে এটি নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন যুগের বিখ্যাত সাহিত্যিকদের পরিচিত সাহিত্যকর্মগুলোর নাম মনে রাখুন। পড়ার সময় সাহিত্যিক ও সাহিত্যকর্মের বানানসহ পড়ুন। গ্রামার অংশে ভালো করে পড়ুন। এগুলো পরে লিখিত পরীক্ষায়ও কাজে আসবে।
৫. বাংলার জন্য ১০-৪৩তম বিসিএসের সব প্রশ্ন, জুডিশিয়ারির প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় আসা সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ বারবার পড়ুন। যেকোনো বই থেকে বিজেএস সিলেবাসে উল্লিখিত সব সাহিত্যিক ও খ্যাতনামা আধুনিক সাহিত্যিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত নোট করে পড়ার চেষ্টা করুন। ব্যাকরণের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৬. গণিতে মোটামুটি বেসিক থাকলে পাঁচটি এমসিকিউর মধ্যে তিনটি পারবেন। বেসিক দুর্বল হলে শতকরা, লাভক্ষতি, ঐকিক নিয়ম, গড়, বীজগণিতের মান নির্ণয় এসব কমন টপিক দেখে যেতে পারেন। তবে লিখিত পরীক্ষায় গণিতে ভালো করতে হলে এখন থেকেই লিখিত পরীক্ষার জন্য গণিত অনুশীলন করতে হবে। বিজ্ঞানের জন্য ডাইজেস্ট বা এ ধরনের বই পড়ুন এবং যত বেশি সম্ভব বিভিন্ন পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নগুলো দেখুন। কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির বেসিক প্রশ্নগুলোও অবশ্যই দেখে যাবেন। এখান থেকেও দু-একটি প্রশ্ন আসতে পারে।
৭. সাধারণত লিখিত পরীক্ষায় যেসব বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়, প্রিলিতে সেখান থেকে ১০টি প্রশ্ন আসে। এই হিসাবে সবচেয়ে সহজে ১০ নম্বর কমন পাওয়া যায় সংবিধান থেকে। সংবিধান থেকে সবই পড়া উচিত, যদি ১০-এ ১০ পেতে চান। সাংবিধানিক ইতিহাস, সংশোধনী, আর্টিকেল ৮০-৯২ এবং ১৩৩-১৫৩, তফসিল, কে কাকে শপথ পড়ান, সাংবিধানিক পদ ও প্রতিষ্ঠান, লাভজনক পদ—এই অংশগুলোও সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। ইন্টারপ্রিটেশনের নানা রুলস এবং জেনারেল ক্লজেজ অ্যাক্টের গুরুত্বপূর্ণ ধারা মাথায় রাখতে হবে।
৭. দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনগুলোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধারা, দিন বা সময় (তামাদি), টাকা (নানা ফি), গুরুত্বপূর্ণ শাস্তি, নানা প্রকারভেদ—এই পাঁচটি অংশ মুখস্থ রাখতে পারলে অনেক প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে। সাক্ষ্য আইন ও পেনাল কোড থেকে উদাহরণযুক্ত প্রশ্ন বেশি আসে। মূল আইনে ধারার সঙ্গে যেসব উদাহরণ দেওয়া থাকে, সেগুলো বারবার পড়ুন। তাহলে হুবহু কমন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৮. পারিবারিক আইন নোট করে পড়ার চেষ্টা করুন। মুসলিম আইন, হিন্দু আইন এবং বাকি তিনটি আইন থেকে এককথায় উত্তর লেখার মতো অনেক প্রশ্ন লিখিত পরীক্ষায়ও আসে। প্রিলির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় যদি নোট করে করে পড়েন, সেটা লিখিত পরীক্ষায়ও অনেকটা সুবিধা দেবে। মুসলিম ও হিন্দু আইনের বৈধ, বাতিল, অনিয়মিত ব্যাপারগুলো মাথায় রাখুন। ইজমা, কিয়াস, ইসতিদলাল, ইহতিহসান ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো করে জানুন। বিভিন্ন অ্যারাবিক টার্মের বাংলা জেনে নিন। এ অংশ থেকেও সহজে ১০ নম্বর কমন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৯. ভূমিসংক্রান্ত আইনের গুরুত্বপূর্ণ থিওরি, ডকট্রিন উদাহরণসহ পড়ুন এবং ধারা মনে রাখুন। চুক্তি আইনের নানা বিষয় নিয়ে বাস্তবসম্মত ধারণা রাখুন। ভূমিসংক্রান্ত আইনগুলোতে প্রতিকার দেওয়ার এখতিয়ার কার কার আছে সেসব সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে
১০. বিশেষ আইনের জন্য শাস্তির পরিমাণ, গুরুত্বপূর্ণ ধারা, বিভিন্ন কমিটির গঠন, ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক, তদন্তের সময়, বিচারের সময়সীমা, আপিল কোথায় করবে এবং কত দিনে করবে এগুলো পড়তে পারলে যথেষ্ট কমন পাওয়া যাবে।
* সম্ভব হলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগেই বিগত বিজেএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলোর সমাধানগুলোও অন্তত একবার হলেও পড়ার চেষ্টা করবেন। লিখিত পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এমন বহু প্রশ্ন প্রিলিমিনারিতেও আসতে পারে।
* যাঁরা অ্যাডভোকেটশিপ দিচ্ছেন, তাঁরা এই কয়েক দিন বিজেএস ও অ্যাডভোকেটশিপের সিলেবাসে থাকা ছয়টি আইন বেশি বেশি পড়ুন। তবে হিসাবমতো এই ছয়টি আইন থেকে বিজেএসের প্রিলিতে মাত্র ২০ নম্বর আসবে। তাই জুনের ১৬ তারিখ পর্যন্ত শুধু এই আইনগুলো পড়লে বিজেএসের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে যাবেন। ছয়টি আইনের বাইরেও বাকি বড় আইন যেমন—সংবিধান, ভূমি আইন এসব পড়ে ফেলা উচিত।
* জুডিশিয়ারিতে টিকতে হলে লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হবে। কিন্তু প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। সম্ভব হলে প্রিলিমিনারির সঙ্গে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন। বেশি কিছু করতে হবে না। একটা অধ্যায় শেষ হলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো লিখে রাখুন এবং বিগত লিখিত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোর সমাধান পড়ে ফেলুন। এতেই লিখিত পরীক্ষার জন্য অনেক এগিয়ে যাবেন।
* সামনে যাঁদের একাডেমিক পরীক্ষা আছে চিন্তার কিছু নেই। এখন থেকে দিনে দুই ঘণ্টা করে জুডিশিয়ারির জন্য পড়তে পারলেও যথেষ্ট হবে। একাডেমিক পরীক্ষা এবং প্রিলিমিনারি একসঙ্গেই সম্ভব যদি সময় কাজে লাগানো যায় এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা গড়ে তোলা যায়।
* অনেক কিছু পড়তে হবে ভেবে ভয়ে বা চাপে আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। কিছুদিন পড়ার পর দেখবেন আসলে অনেক কিছুই পড়ে ফেলেছেন! কারণ একাডেমিক জীবনে কোনো না কোনোভাবে একই বিষয় আপনি আগে পড়েছেন। তা ছাড়া জ্ঞানান্বেষণ আর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ভিন্ন বিষয়।
অনেক কিছু পড়তে হবে, আমি কি পারব? কোন বই পড়ব? প্রিলিমিনারি পাস করলে লিখিত পরীক্ষা বাংলায় লিখব না ইংলিশে লিখব? কবে পরীক্ষা হবে?—এসব ভেবে দুশ্চিন্তা না করে বরং ‘বেয়ার অ্যাক্ট’ ও প্রিলিমিনারির একটি বই নিয়ে পড়া শুরু করে দিন। প্রস্তুতি শুরু করলে আরো কী কী বই দরকার হবে, মাথা খাটালে নিজেই বুঝতে পারবেন।