শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
Menu

শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও জননী এসেছে বাংলার দ্বারে! শুভ শারদীয়া।

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ :  October 1, 20225:57 am

মহালয়া থেকে ক্ষণ গণনার পর আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, আজ ষষ্ঠী, দেবীর বোধন, বোধনের পর দেবীর অধিবাস। এরপর বেল তলায় দেবীর আরাধনা। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সপরিবারে একরাত সেখানেই থাকবেন মা দুর্গা। সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে। শনিবার (১ অক্টোবর) সকালে সায়ানকালে কল্পারম্ভ ও বোধন আমন্ত্রণসহ অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হয়। এবার পঞ্জিকা মতে দেবীর গজে (হাতিতে) আগমন আর নৌকায় গমন।

বোধন

পুরাণ মতে, সূর্যের উত্তরায়ণ হচ্ছে দেবতাদের দিন। সূর্যের এই গমনে সময় লাগে ছয় মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। আর দিনের বেলায় দেবতারা জেগে থাকেন। তাই শাস্ত্র মতে দিনেই দেবতাদের পূজা করা হয়। আবার সূর্যের দক্ষিণায়ন হলো দেবতাদের রাত। সূর্যের এই গমনকালে ছয় মাসকে দেবতাদের এক রাত ধরা হয়।  আর রাতে দেবতারা পূজার জন্য ‘অকাল’। কিন্তু দেবীর পূজা করতে হলে তো তার বোধন অর্থাৎ জাগরিত করতে হবে। তাই শরৎকালে এই অকাল বোধন হিসেবে ধরা হয়। তবে রামচন্দ্রের আগে প্রথম আদ্যাশক্তি মহামায়ার পূজা করেছিলেন রাজর্ষি শুঁঠ। আর তার সঙ্গী ছিলেন সমাধি বৈশ্য। সেই পূজাকে আমরা বর্তমানে বাসন্তী পূজা নামে জানি।

অকাল বোধন

রাবণ ছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবের বর-প্রাপ্ত। আর দেবী দুর্গা বিভিন্ন রূপের একনিষ্ঠ সাধকও ছিলেন তিনি। কিন্তু রামের হাতে রাবণের বধ ছিল দৈববাণী। তাই রাম-রাবণের যুদ্ধ তখন অবশ্যম্ভাবী সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার দ্বারস্থ হলেন দেবতারা কিন্তু দেবী তখন নিদ্রিতা। দেবতাদের অনুরোধে স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীর পূজা করে তাকে তুষ্ট করার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। দেবী বললেন, যদি রামচন্দ্র তার বোধন করেন, তবেই তিনি রাবণ বধে তাকে সাহায্য করবেন। রামচন্দ্র লঙ্কা অভিযানের আগে তাই করেছিলেন। সেজন্যই শরৎকালের এই দুর্গা পূজা অকাল বোধন নামেও পরিচিত।

বেল গাছের নিচে কেন একদিন থাকবেন দুর্গা

রামকে দেবীর নির্দেশের কথা জানিয়ে দেন প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবরাজ ইন্দ্র। যেহেতু সময়টা ছিল শরৎকাল, তাই রামচন্দ্র নিজ হাতে দেবীর মূর্তি গড়ে তার আরাধনার প্রস্তুতি নিলেন। সেই সময় ধ্যানে বসে  ব্রহ্মা দেখলেন বেল গাছের নিচে একটি ৮-১০ বছরের বালিকা খেলা করছে। ব্রহ্মা বুঝলেন তিনি দেবী। তারপরেই প্রজাপতি স্থির করলেন দেবীর বোধনের পুজো হবে ঐ বেলা গাছের নিচেই। সেই কারণে প্রথা মেনে আজও বোধনের আগে বেল গাছের পূজা করে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয় দেবীর ঘটে। তারপরেই শুরু হয় বোধন, শুরু হয় দেবীর আরাধনা।

এবার বোধনের আগেই বিসর্জন

গত ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এক নৌকাডুবিতে ৬৮ জন জলে ডুবে মারা যান। তাদের মধ্যে ৩০ জন নারী, ২১ জন শিশু ও ১৭ জন পুরুষ রয়েছেন। এখনও নিখোঁজ কয়েকজন। সেই ঘটনায় শারদলক্ষ্মীকে বরণ করার আগে করতোয়া পাড়ে যেন বিসর্জনের বাজনা বেজে ছিল। পুরো দেশ নুয়ে পড়েছিল শোকে। এদিকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে এক শোক পৌঁছে গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। দেশের গণমাধ্যম তো বটেই, বিদেশি অনেক গণমাধ্যমে নৌকাডুবির খবরটি প্রকাশ হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গেই। খবরগুলোতে বলা হয়েছে, সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঐ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা।

আবারও চোখ রাঙাচ্ছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী

দুর্গা পূজার আগে মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙার খবর যেন খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও এর ব্যক্তিক্রম হয়নি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবার অন্তত ১৩ মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বাড়বে বৈকি কমবে না। এ ঘটনাগুলোতে কাউকে আটক করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো একটি ইউনিট। এর মধ্যে আরও এক দুর্ভাবনার খবর দিয়েছে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার। তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, অন্তত ৫০ জন এর মধ্যে বাড়ি ছেড়েছেন, এবং দুর্গা পূজায় সম্ভাব্য হামলা এবং হামলার প্রশিক্ষণও নিয়ে ফেলেছেন। এমন বার্তায় ইতিমধ্যে সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- গতবারের কুমিল্লার মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূজা সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা ও সতর্ক থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উৎসবের শুরু থেকে শেষ অব্দি আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট নিরাপত্তায় কাজ করে যাবে।

শেষ কথা

গ্রীষ্মের অভিঘাত ও বর্ষার দুঃস্বপ্নের পরই তো উমা আসেন জগতকে নির্মল আনন্দে ভরিয়ে দিতে এবং সুর ও অসুরের মঞ্চ থেকে অসুরকে সংহার করতে। তার আশীর্বাদে জীবনের সব হতশ্রী দূর হোক, সবার অন্তর্লোকে স্পন্দিত হয়ে উঠুক জীবন যাপনের মধুর ছন্দ।

শুভ শারদীয়া।