শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
Menu

‘মা’ দিবসে এক যৌনকর্মী মায়ের বুকফাটা কান্না

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ :  May 8, 20221:14 pm

আজ ‘মা’ দিবস। পৃথিবীর সব মা চান তার সন্তান জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক, সুখী হোক। নিষিদ্ধ পল্লির একজন মাও এর ব্যতিক্রম নন। তেমনই একজন মায়ের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য আমি সব করেছি। মেয়ে আমার উচ্চশিক্ষিত হয়েছে; কিন্তু তাতে কি লাভ হয়েছে? আজ আমার কারণে আমার মেয়েকে সমাজের প্রতিটি পদে পদে নিগৃহীত ও অপমাণিত হতে হয়। এমএ পাশ করেও আমার পরিচয়ের কারণে কোনো ভালো চাকরি পাচ্ছে না। সমাজের অন্য ১০টি মেয়ের মতো সমাজে চলতে পারছে না। মেয়েকে নিয়ে আমার স্বপ্ন যেন একটু একটু করে ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে। অশ্রুসজল কণ্ঠে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন সেই মা। সরেজমিন আলাপকালে তিনি জানান, দেড় যুগ আগে ভালোবেসে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের পর জানতে পারেন ভালোবাসার মানুষ তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তিনি বিবাহিত এবং ২ সন্তানের বাবা। সেই সঙ্গে মাদকাসক্ত। তারপরও তিনি সেই স্বামীর ঘরে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। মাতাল স্বামীর পাশাপাশি তার সতিনও তাকে অত্যাচার করতেন। এরই মাঝে তার কোলে আসে ফুটফুটে কন্যাশিশু এ অবস্থায় তার স্বামী তাদের ফেলে পালিয়ে যায়। তিনিও স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন। তার স্বামী ঢাকায় আছে শুনে কোনো কিছু না বুঝেই রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশে; কিন্তু এভাবে ঢাকায় গিয়ে কোনো মানুষকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না, তা তিনি তখনো ধারণা করেননি। গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় তার এক দুঃসম্পর্কের বোন থাকার কথা তিনি জানতেন। ঢাকা থেকে নিরাশ হয়ে তিনি দৌলতদিয়ায় আসেন ওই বোনের সঙ্গে দেখা করতে। এতেই তার স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায় যৌনপল্লি। বিষয়টি যখন তিনি বুঝলেন, তখন তিনি সেখান থেকে মুক্ত হতে গিয়ে জানলেন, এখান থেকে যেতে হলে তাকে ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ৫ হাজার টাকা তো দূরের কথা তখন তার কাছে ৫টি টাকাও ছিল না। একপর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তার জীবন তো শেষই হয়ে গেছে। এখানে থেকেই তিনি মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবেন। শিশুটিকে তিনি প্রথমে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশের সেফহোমে এবং একটু বড় হলে ভর্তি করেন অপর এনজিও কেকেএস সেফহোমে। সেফহোমে থেকে তার মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটু একটু করে এগিয়ে যান। সম্প্রতি তিনি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্মে সাফল্যের সঙ্গে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করে এখনো ভালো কোনো চাকরি জোটেনি তার ভাগ্যে। অশ্রুসজল চোখে সেই মা বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার হয়ে অন্ধকার পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছি। এতে আমার মেয়ের কি কোনো অপরাধ ছিল? কী পাপ করেছে আমার মেয়ের? কেন সে সমাজের অন্য ১০ জন মেয়ের মতো জীবনযাপন করতে পারবে না?

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান মামুন বলেন, যৌনপল্লিতে জন্ম নেওয়া বেশ কয়েকজন শিশু লড়াই-সংগ্রাম করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বাবার সঠিক পরিচয় না থাকায় তাদের  নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি তিনি নির্বাচন কমিশনে খোঁজ নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।