মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
Menu

ভুয়া এমবিবিএস পাস সার্টিফিকেট বিক্রি করে কোটিপতি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ :  April 7, 20223:59 pm

প্রায় দুই দশক ধরে ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজ ’র নামে এম.বি.বি.এস, বিডিএস, এমফিল, পিএইসডি, ইন্জিনিয়ারিং, এডভোকেটশিপ এই ধরনের ১৪৪টি বিষয়ের উপরে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করতো একটি প্রতারক চক্র। এমবিবিএস ডিগ্রীর জন্য ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন ডা. মো. নুরুল হক সরকার। এভাবে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। চক্রের মূল প্রতারক নিজেকে ভিসি ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার ডাক্তার পরিচয় দিতেন। প্রতারণার কাজে পরিবারের সদস্যদেরসহ অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় ভুয়া সনদপত্র প্রদানের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে। এই সংঘবদ্ধ চক্র কোন রকম পরীক্ষা ক্লাশ ও বৈধ অনুমোদন ছাড়া টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১৪৪ ধরনের ভুয়া জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে যা সংঘবদ্ধ চক্রটি তাদের বাসায় ও ভাড়া করা অফিসে বসে বিভিন্ন সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের আদলে কম্পিউটার প্রিন্ট করে সরবরাহ করতো। অবশেষে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া ভিসি ও ১ জন সহযোগীসহ ভুয়া ৪ জন এম.বি.বি.এস ডাক্তারদেরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। বুধবার রাজধানী মালিবাগের এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলো- ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২), ও তার সহযোগী মো. মোয়াজ্জেম হোমেন (৫৮)। আর ভুয়া ডাক্তাররা হলো- ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল (৩০), মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ (৩৭), ডা. আমান উল্ল্যাহ (৩৮) এবং দেবাশীষ কুন্ডু (৫২)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এ্যাডমিট কার্ড, নকল সিল উদ্ধার কর হয়। এছাড়াও ৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ভুয়া সনদ প্রদানের চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, নব দিগন্ত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড ডক্টরস চেম্বার এর কপি ও ১টি সিপিইউ, একটি মনিটর, একটি কি বোর্ড ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়। যা এসকল ভুয়া সনদপত্র তৈরি ও ছাপার কাজে ব্যবহৃত হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রটি গত প্রায় দুই দশক ধরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা করে আসছিল। প্রতারনার কাজে তারা ভুয়া ওয়েবসাইট, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন, কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাস যা বাস্তবে অস্তিত্বহীন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালযয়ের ভুয়া আদেশ হাইকোর্টের জাল রিট প্রদর্শন করে। এমনকি প্রতারক চক্রের রোগী দেখার চেম্বার অত্যাধুনিক উপায়ে সজ্জিত এবং নামফলক সম্বলিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রী উল্লেখসহ আকর্ষনীয় ভাবে প্রদর্শন করতো। সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, তারা এম.বি.বি.এস, বিডিএস, এমফিল, পিএইসডি, ইন্জিনিয়ারিং, এডভোকেটশিপ এই ধরনের ১৪৪ টি বিষয়ের উপরে অসংখ্য সার্টিফিকেট প্রদান করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বাস্তবে Premier University of Technology এর কোন অস্তিত্ব নাই। একই ভাবে সে নিজেকে Pitch blende University of science and (pust) এবং Peace land University ইত্যাদি নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকে। ডা. সাইদুর রহমান, দেবাশীষ কুন্ডু, ডা. মো. আমান উল্ল্যাহ, মো. মাহফুজুর রহমানসহ আরো অসংখ্য ব্যক্তিদেরকে ভুয়া ডাক্তারি সনদপত্রসহ অন্যান্য অসংখ্য বিষয়ে ভুয়া সনদপত্র প্রদান করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রতারক ডাক্তার এম এন হক তার পরিবারের সদস্যদেরসহ অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় ভুয়া সনদপত্র প্রদানের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে। এই সংঘবদ্ধ চক্র কোন রকম পরীক্ষা ক্লাশ ও বৈধ অনুমোদন ছাড়া টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১৪৪ ধরনের ভুয়া জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে যা সংঘবদ্ধ চক্রটি তাদের বাসায় ও ভাড়া করা অফিসে বসে বিভিন্ন সরকারী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের আদলে কম্পিউটার প্রিন্ট করে সরবরাহ করে আসছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চিকিৎসা গ্রহণ ও নিজেদের সন্তানদের যেকোন মেডিকেল অথবা ডেন্টাল কলেজে ভর্তির আগে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ক্ষেত্র বিশেষে ইউজিসি ( বিশ্ববদ্যিালয় মন্জুরী কমিশন) এর অনুমোদিত কি-না তা যাচাই করার পরামর্শ দেন তিনি ডিবি প্রধান। ভুয়া ডাক্তারি সনদ নিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান ডিবির এ কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিএমপির রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। প্রতারণার কৌশল জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সার্টিফিকেট প্রত্যাশিরা মোবাইলের মাধ্যমে সার্টিফিকেটের জন্য যোগযোগ করে এবং পার্সেলের মাধ্যমে ভুয়া সার্টিফিকেটগুলো পাঠানো হতো। এমবিবিএস ডিগ্রীর জন্য ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন ডা. মো. নুরুল হক সরকার। এমবিবিএস ডিগ্রী দেয়ার সঙ্গে তিনি একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও দিতেন, সেটিও ছিল ভুয়া। ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির মালিক হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তার ইউনিভার্সিটিতে কতজন শিক্ষক রয়েছেন সেটিও তিনি ভুলে গেছেন বলে জানান। সম্পূর্ণটাই তার ভণ্ডামি। প্রতারক হিসেবে এই লাইনে সে প্রসিদ্ধ। এসব ভুয়া ডিগ্রী নিয়ে এই ভুয়া ডাক্তাররা কোনো চাকরি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন আছেন চাকরিজীবী। সাভারে একজনের চেম্বার রয়েছে এবং ডায়াগনটিস্টিক চেম্বার রয়েছে।