শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন
Menu

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি, আমীর খসরু

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ :  March 12, 20233:35 pm

বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে আবারও জানিয়েছে বিএনপি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক বিএনপির এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রোববার দুপুরে গুলশানের একটি বাড়িতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ দেশগুলোর রাষ্ট্রদুত ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বেঠকে বসে বিএনপি। বৈঠকে সব দলের অংশগ্রহনে সুষ্ঠু ভোট, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়। দুপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আন্তজার্তিক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে এই বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, স্পেন, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা আমীর খসরু সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, বিএনপি ইইউ রাষ্ট্রদূতদের স্পষ্ট করে বলেছে, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। আর বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ যেভাবে বর্তমান পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোও নিবিড়ভাবে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করছে। তারই অংশ হিসেব তারা (ইইউ) দেখছে বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থা কি, মানবাধিকার ও  আইনের শাসনের অবস্থা কেমন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশের মধ্যে যে একটা শঙ্কা কাজ করছে, সেদিকেও স্বাভাবিকভাবে তাদের একটা দৃষ্টি আছে। আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে, এখানে যে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ দখলদার সরকার আছে, এই প্রেক্ষাপটে আলোচনা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট থাকার কারণে তো আজকের এই আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ যদি আবারও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, বাংলাদেশে যে সংকটের দিকে যাবে, এই শঙ্কা যেমন দেশের ভেতরে কাজ করছে, তেমনি দেশের বাইরেও কাজ করছে। এই সংকট থেকে তারা (ইইউ) জানতে চাচ্ছে কীভাবে আগামী নির্বাচনটা হবে, কীভাবে নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক করা যায়। তিনি আরও বলেন, সবার উদ্দেশ্য একটাই, দেশের মানুষের যে চিন্তা, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ ও সরকার হবে। ইইউ প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে তাদের কি আলোচনা হয়েছে, সেটা তো আমরা বলতে পারব না। বিএনপি যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না সেটা কি ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন- জানতে চাইলে খসরু বলেন, অবশ্যই, এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, যেটা আমরা ঘোষণা করেছি। তেমনিভাবে বিশ্বে যারা এদেশকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কাজ করছে, সবার কাছে এটা পরিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমান এই অবৈধ সরকারের অধীনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না, এই বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে। এর কারণগুলো সবার কাছে জানা। ডক্টর ইউনুস প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, উনার সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি বৈঠকে। শুধু উনি নন, প্রতিনিয়ত বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বে বিভিন্ন রিপোর্ট হচ্ছে। এই রিপোর্টগুলো বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, যারা অবৈধভাবে সরকারে বসে আছে তাদের মাথায় ঢুকছে কি না সেটাই দেশের মানুষের প্রশ্ন।পঞ্চগড়ের হামলা সরকারের পূর্বপরিকল্পিত: মির্জা ফখরুল। এদিকে, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলার ও ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির একটি তদন্ত দল ঐ এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার গভীরে গেলে স্পষ্ট বোঝা যায় এটা কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিত ঘটনা। এই হামলা সরকারের পূর্বপরিকল্পিত ছিলো, পঞ্চগড়ের ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের আড়াল করতে ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, পুলিশ সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ইতিমধ্যে বিএনপির ১৮১ জন নেতা-কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ঘটনায় জড়িত মূল হোতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা না থাকায় দেশে পঞ্চগড়ের মতো ঘটনা ঘটছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি সেখানে গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি সরেজমিনে রিপোর্ট তৈরি করেছেন। এ ধরনের হামলা যে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হোক না কেনো, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়।বিএনপি গঠিত তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকা দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। লুটতরাজ, হত্যাকারীদের লজ্জাবোধ নেই। তারা মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে ভুক্তভোগীদের সামনে হাজির হয়। যখন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সুরক্ষার প্রয়োজন ছিলো, তখন প্রশাসন নিশ্চুপ ছিলো। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্তচিৎকারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বোধোদয় হয়নি। দেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই, জবাবদিহি নেই, যারা অপরাধ করেছে, তারা প্রকাশ্যে ঘুরছে। গত ৩ মার্চ পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২ তরুণ নিহত হন, এছাড়া পুলিশ-সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন।