পাহাড়ের সংকীর্ণ পথে তীব্র একটা বাঁক নিয়েই ড্রাইভার বললেন, দেখুন, দেখুন, ওই যে সাইরু। পাহাড়ের বঙ্কিম সবুজ দৃশ্যপট এতক্ষণ আমাদের চোখ আর মন অবশ করে রেখেছিল। ড্রাইভারের কথায় সংবিৎ ফিরল। তাঁর চোখের ইশারার দিকে আমাদের সবার চোখ ছুটে গেল একসঙ্গে। পাহাড়ি রাস্তার পর গভীর শূন্যতা পার হয়ে দূরে পাহাড় আর বনজ গাছপালার ঝোপে মিশে থাকা সাইরু রিসোর্ট আমাদের নজরে আসে। পাহাড়ের উঁচু–নিচুর মধ্যে সাইরুর অনুভূমিক নকশা কোথায় যেন একটা ভারসাম্য রচনা করেছে। মনে স্থিতি আসে। ভ্রমণপথের ক্লান্তির ওপরে স্নিগ্ধতার স্রোত বয়ে যায়। শরীরে ক্লান্তি না আসার কোনো কারণ ছিল না। আজ আমরা ঘুম থেকে উঠেছি সূর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আমরা মানে শরণ্য, শ্রেয়া আর শাওন—আমাদের ছেলে, মেয়ে আর ওদের মা। ফাউ আমি তো আছিই। ঘুম থেকে উঠে বিমানবন্দর, এরপর বিমানের পেটে করে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে গাড়িতে চড়ে ক্রমেই বান্দরবানের গভীরে। সেই কাকডাকা ভোরের পর এখন শেষ দুপুর। মাথার ওপরে সূর্য কাত হয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাইরুতে ঢুকতেই ক্লান্তি উধাও। খোলামেলা পরিসরে চোখ কোথাও বাধা পায় না। উন্মুক্ত আকাশ। এর তলায় পাহাড়ি দৃশ্যপট। বিচিত্র গাছ কোথাও সুশৃঙ্খলভাবে সযত্নে রোপিত। কোথাও বা বুনো গাছ আর লতাপাতা নিজের খেয়ালে ঝোপ বেঁধে আছে। আর এসবের ফাঁকফোকরে, ঢেউখেলানো পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ভবন, ঘরদোর আর ভ্রমণার্থীদের আয়েশের নানা আয়োজন। অভ্যর্থনাস্থল, অফিস, রেস্তোরাঁ আর নিসর্গ উপভোগের জন্য তৃষ্ণার্ত অতিথিদের অলস সময় কাটানোর জায়গাটুকু মিলিয়ে মূল স্থাপনা। সেটি দিগন্তরেখার একেবারে সমান্তরাল। নিজেকে বুক ফুলিয়ে না দেখিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। ইচ্ছা করলে এই ঈদের ছুটিতে আপনার ঘুরে আসতে পারেন পাহাড়ে।