প্রায় দুই মাস জুড়ে পুরোটা সময় হলিউডের একমাত্র আলোচনার বিষয় ‘পাইরেটস অফ দা ক্যারিবিয়ান’ খ্যাত হলিউড অভিনেতা জনি ডেপের করা এক মানহানির মামলা। মামলা করা হয়েছে তারই সাবেক স্ত্রী এ্যকুয়ামানের মূল নারী চরিত্রে অভিনয় করা অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে। সে মামলার শুনানি সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেলগুলোতে। মামলার শুনানির মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে হলিউডের শিল্পী হয়ে বিপুল খ্যাতি আর অর্থের মধ্যে থাকা মানুষেরা কতটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছেন। বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার আর টিকটকের মত সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যম ছেয়ে গেছে অ্যাম্বার আর জনির গল্পে। সেই মামলার অদ্যোপান্ত জানবো আজ। ২০০৯ সালে ‘দি রাম ডায়েরি’ সিনেমার সেটে জনি ডেপের সাথে অ্যাম্বার হার্ডের পরিচয় হয়। তখনও জনি ডেপ তার দীর্ঘদিন সঙ্গী ‘ভ্যানিসা প্যারাডিস’ এর সাথে সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন। ২০১২ সালে প্রথম তাদের বিচ্ছেদের খবর জানা যায়। অ্যাম্বার হার্ডও জানান, ২০১১-২০১২ সাল থেকেই জনির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। এর দুই বছর পর এনগেজমেন্ট আর ২০১৫ সালে বিয়ে হয় জনি ডেপ এবং অ্যাম্বার হার্ডের। কিন্তু বিয়ের ১৫ মাসের মাথায় ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেন অ্যাম্বার হার্ড। অভিযোগ করেন, জনি ডেপের নির্যাতনের শিকার তিনি। ২০১৭ সালে ডিভোর্স হয় সাবেক এই দম্পতির। ডিভোর্স সেটেলমেন্ট হিসেবে এম্বার হার্ডকে ৭০ লাখ ডলার দিতে বলাহয় জনি ডেপকে। এরপর ২০১৮ সালে এম্বার হার্ড ওয়াশিংটন পোস্টে এক সম্পাদকীয় ফিচারে দাবি করেন জনি ডেপের নির্যাতনের শিকার তিনি। এরপর লন্ডনভিত্তিক ট্যাবলয়ডে পত্রিকা জনিকে ‘ওয়াইফ বিটার’ বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পর পরই ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট থ্রি’ মুভি থেকে বাদ দেয়া হয় জনি ডেপকে। ২০১৯ সালে জনি ডেপে ৫০ মিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করে অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এম্বার হার্ড নয় বরং জনি ডেপই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। জনি তো নয়ই বরং অ্যাম্বার হার্ডই মারধোর করতেন তাকে। ২০২০ সালে এক জনি আর অ্যাম্বারের এক অডিও আলাপ প্রকাশ হয় যেখানে শোনা যায়, অ্যাম্বার হার্ড বার বার সরি বলছেন জনির গায়ে হাত তোলার জন্য। অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, আবারও স্বামীর যে গায়ে হাত তুলবেন না সেই কথাও দিতে পারছেন না এম্বার হার্ড। এরপর ২০২১ সালে এম্বার হার্ড পাল্টা মামলা করেন জনি ডেপের বিরুদ্ধে। জনির ডেপের করা ৫০ মিলিয়ন ডলারের পাল্টাপাল্টি ১০০ মিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করে অ্যাম্বার। চলতি বছর এপ্রিলের ১১ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি কোর্ট হাউজে শুরু হয় মানহানি মামলার শুনানি। শুরুতেই এম্বার হার্ডের আইনজীবী বলেন, জনি ডেপ এই মামলাতে বিভিন্ন নাটক করতে যাচ্ছেন। অ্যাম্বার তার বাক স্বাধীনতার অংশ হিসেবেই ফিচারটি লিখেছেন বলে দাবি করেন তিনি। শুরুর বক্তব্যে এম্বারের আইনজীবী বেনজামিন রোটেনবর্ন প্রমাণ করার চেষ্টা করেন এম্বার হার্ড কারো বিরুদ্ধে নয় বরং পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছেন প্রতিবেদনটিতে। বিপরীতে জনি ডেপের আইনজীবী বেনজামিন চু দাবি করেন, এম্বার নিজেকে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার দাবি করে জনি ডেপের ওপরই অভিযোগের তীর ছুড়েছেন। যার ফলে জনির ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, ভাটা পড়েছে তার অভিনেতা ক্যারিয়ারেও। কোর্টে জনি ডেপ দাবি করেন, অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে থাকার সময় মদ আর কোকেনে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। এই সময়টায় তাকে মাদকাসক্তি থেকে বের আনার জন্য অ্যাম্বার চেষ্টা তো করেইনি বরং জনি ডেপকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন তার পরিবার আর ক্যারিয়ার থেকে। এমনকি জনি সন্তানদের সাথেও দেখা করতে দিতে চাইতেন না অ্যাম্বার। সুস্থ বা মাতাল কোন অবস্থাতেই অ্যাম্বারের গায়ে হাত তোলেননি তিনি বরং এম্বার হার্ড চড় ঘুষি মেরেছেন তাকে। এমনকি এম্বারের ছোঁড়া ওয়াইনের বোতলের আঘাতে আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলেও দাবি করনে জনি। এমনকি জনি ঘুমে থাকা অবস্থায় এম্বার তার বিছানায় মল ত্যাগ করেন বলেও অভিযোগ করেন জনি ডেপ। জনির সব অভিযোগ অস্বীকার করে এম্বার হার্ড জানান, জনি ডেপ অসংখ্যবার রাগের মাথায় তাকে মারধোর করেছেন। এমনকি মদের বোতল দিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগও করেন এম্বার। শুধু তাকে নয় তার বোনের গায়েও জনি হাত তুলেছেন বলে অভিযোগ করেন অ্যাম্বার। আদালতে সাক্ষী দেন অ্যাম্বারের ছোটবোন। ডিভোর্সের আগে অ্যম্বারের মুখে আঘাতের একটি ছবিও দেখানো হয় প্রমাণ হিসেবে। এছাড়া অডিও রেকর্ডিংয়ে অ্যাম্বারকে গালি দেবার প্রমাণও হাজির করেন তার আইনজীবী। এই মানহানির মামলার লড়াইয়ে সামাজিক মাধ্যমে অজস্র প্রশংসা কুড়িয়েছেন জনি ডেপের আর আইনজীবী ক্যামিল। কারণ অ্যাম্বারের সব কথাই যে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন ক্যামিল। আদালতের সামনে এই আইনজীবী বিভিন্ন ছবি, ইমেইল, কথোপকথন আর সাক্ষী দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, অ্যাম্বার কতটা দুর্বিষহ করে তুলেছিলো জনির জীবনকে। হলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই মামলার রায় হয়েছে ৩১ মে। রায়ে জুরিবোর্ডের রায় গেছে জনি ডেপের পক্ষ। আদালত রায়ে বলেছে, অ্যাম্বারের মামলায় জনি ডেপের মানহানি হয়েছে এবং এ কারণে অ্যাম্বারকে দেড় কোটি ডলার অর্থদণ্ড দিয়েছে। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে এ মামলার রায় হার্ডের পক্ষেও গেছে। আদালত বলেছে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে হার্ড পাবেন ২০ লাখ ডলার।
শুধুমাত্র ভক্তদের আস্থা ফিরিয়ে আনতেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছেন তিনি। আর এই মামলার শুনানির মাধ্যমে ভক্তরা আসল জনি ডেপকে চিনতে পেরেছেন বলেই বিশ্বাস তার। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো জনির এই কথাকেই সমর্থন করে। শুনানির শুরুর পর থেকে জনির ভক্তরা ভালবাসায় ভরিয়েছেন তাদের স্ট্যাটাস। শক্তিমান এই অভিনেতাকে যে তারা আবার পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ানে দেখতে চান সেই দাবি এখন বেশ জোরালো। আদালতের রায় যাই হয়েছে, জনতার রায়ে জনি ডেপের বিজয় ঠেকায় কে!