কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে সার্জারির কাজ চলছে রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর মালিকে দিয়ে। এতে করে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশপাশি নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনবল সংকটকে দায়ি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকের সাথে সার্জারিতে অংশ নিয়েছেন অবসর নেয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবি দাস। শুধু অপারেশন থিয়েটার নয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও তিনি সার্জারির কাজ করে আসছেন নিয়মিতভাবে। জরুরি বিভাগসহ অপারেশন থিয়েটারে একইভাবে সার্জারির কাজ করেন রাঁধুনি, মালি এবং পরিচ্ছন্নকর্মীরা। রোগীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবি দাস বলেন, আমি গত ১ ডিসেম্বরে ঝাড়ুদারের কাজ থেকে অবসর নিয়েছি। আমি ওটি এবং জরুরি বিভাগে নিয়মিত কাজ করে আসছি। ডেসিং এবং সেলাইয়ের কাজ করতে পারি। সাবেক অনেক চিকিৎসকের সাথেও আমি কাজ করেছি। রাঁধুনি পদের বাচ্চু মিয়া বলেন, আমার পদ রাঁধুনি হলেও আমি জরুরি বিভাগের সব কাজই পারি। এর আগেও আমি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ফুলবাড়িসহ অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ করেছি। এই হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় না থাকায় জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছি। আমার মতো হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মালি পদের দেলোয়ার হোসেন, মিজানুরও কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক মালি পদের দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি ফুলের বাগান দেখভালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। জরুরি বিভাগেও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। পাশাপাশি সেলাই ও ডেসিংয়ের কাজও করতে পারেন বলে জানান তিনি। উপজেলার বৈদ্যেরবাজারের বাসিন্দা শ্রী বাবলু চন্দ্র রায় বলেন, আমার মায়ের বয়স প্রায় ৭৫ বছর হয়েছে। তার বাম পা একটু কেটে গিয়ে ইনফেকশন হয়ে পচন ধরেছে। দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। রবি ভাই,দেলোয়ার ভাই আমার মায়ের পা ডেসিং করেন ননিয়মিত। এজন্য আমি খুশি হয়ে তাদেরকে ডেসিং করার সময় কিছু বকশিস দেই যেন তারা ভালো করে কাজ করেন। রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মিজানুর রহমান এসব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের কারণে রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ৩ জন ওয়ার্ড বয়ের বিপরীতে আছেন ১ জন। তিনিও বর্তমানে উমর মজিদ ইউনিয়ন সাব সেন্টারে কর্মরত। রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হাসপাতালটি ২৫ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জনবল রয়েছে মেডিকেল অফিসার পদে ৮ জন, নার্সিং সুপারভাইজার ১ জন, সিনিয়র নার্স ২৬ জন, মিডওয়াইফ ৬ জন, ল্যাব টেকনিশিয়ান ২ জন, প্রধান সহকারী ১ জন, অফিস সহায়ক ৩ জন, ফার্মাসিস্ট ২ জন, পরিসংখ্যানে ১ জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২ জন, অ্যাম্বুলেন্স চালক ১ জন, মালি ১ জন, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ৫ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৩ জন।
কুড়িগ্রামের একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্জারি করেন রাঁধুনি-মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ডাক্তার কোথায়?
প্রকাশ : May 7, 20232:50 pm
