মঙ্গলবার, ০৬ Jun ২০২৩, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
Menu

ইউক্রেনের লুহানস্ক পুরোপুরি দখলে নেয়ার দাবি রাশিয়ার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ :  June 8, 20229:37 am

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় পুরো অংশ রুশ বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেই সঙ্গে সেভেরোদোনেৎস্ক শহরটি পুনরায় নিজেদের দখলে নেয়ার দাবিও করেছে মস্কো। শহরটির গভর্নরও তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে বুধবার (৮ জুন) ইউক্রেন সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে তাদের সেনারা রুশ আক্রমণকে প্রতিহত করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, সেখানে সেনা ও সমরাস্ত্র বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছে ক্রেমলিন।এদিকে, রাশিয়া ১৬০ জন ইউক্রেনীয় যোদ্ধার মরদেহ কিয়েভকে ফেরত দিয়েছে। সেই সঙ্গে আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনের এক হাজারেরও বেশি সেনা সদস্যকে তদন্তের জন্য রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধ পরিস্থিতির রূপ বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৭ শতাংশ ‘স্বাধীন’ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এক বৈঠকে মন্ত্রী সের্গেই সোইগু জানান, সেভোরোদনেস্ক শহরের আবাসিক এলাকা এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া শিল্প এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে আরও চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে লুহানস্কের ইউক্রেনীয় গভর্নর সেরহি হাইদাইয়ের দাবি, সেভেরোদনেৎস্কতে লড়াই চলছে। নভোখতিরকা ও ভরোনোভে রুশ আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শিল্পাঞ্চল লুহানস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা সেভেরোদোনেৎস্কের পুরোপুরি দখল নিতে মঙ্গলবার দিনব্যাপী তীব্র লড়াই হয়েছে। রুশ সেনাদের প্রবল আক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে ইউক্রেনের সেনারা। ডনবাস অঞ্চলকে মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে সহায়তা করছে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে ডনবাসের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। তখন থেকে এই অঞ্চলকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে রাশিয়া। মঙ্গলবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও জানিয়েছেন সেভেরোদনেৎস্কের রাস্তায় দুই বাহিনীর মুখোমুখি লড়াই আরো তীব্রতর হচ্ছে। তাদের সেনা ও সমর নায়করা সেই লড়াইয়ে হাল ছাড়েননি। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সেভেরোদনেৎস্ক দখল করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না রাশিয়া। তার জন্য বিশাল বাহিনী ও সেনা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে মস্কো। একই সঙ্গে এই সমস্ত এলাকায় গোলাগুলি বর্ষণের তীব্রতাও বহু গুণে বেড়েছে। ইউক্রেন বাহিনীর হামলায় ডনবাস এলাকায় রুশ মেজর জেনারেল রোমান কুটুজোভ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বুধবার ডনবাসের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ডেনিস পুশিলিন সে কথা জানান। যদিও রুশ প্রশাসন সরকারিভাবে এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। এদিকে রাশিয়া কিয়েভকে ১৬০ ইউক্রেনীয় যোদ্ধার মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে যাদের অধিকাংশই মারিউপোলের ইস্পাত কারখানার প্রতিরোধ যুদ্ধে নিহত হয়েছে। বিনিময়ে সমান সংখ্যক মরদেহ রাশিয়ার কাছেও হস্তান্তর করেছে কিয়েভ। এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি রাশিয়া। হস্তান্তরের মধ্যে ৫০ জনের মরদেহ আজভ রেজিমেন্ট যোদ্ধাদের বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার। অন্যদিকে মারিউপল শহরে আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনের এক হাজারেরও বেশি সেনা সদস্যকে তদন্তের জন্য রাশিয়ায় নেয়া হয়েছে। এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় খেরসন শহরে নতুন করে সাংবাদিক ও অধিকার কর্মীসহ পাঁচশ’র বেশি বেসামরিক নাগরিককে বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ক্রিমিয়ার ইউক্রেনীয় দূত তামিল তাশেভা জানিয়েছেন, অঞ্চলটিতে প্রায় ৬০০ লোক রয়েছেন যারা আসলে জিম্মি। তাদের বিশেষ কারাগারে রাখা হয়েছে।রাশিয়ার হামলায় এখন পর্যন্ত ২৬৩ শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। এছাড়া আরও ৪৬৭ জনের বেশি শিশু আহত হয়েছে। মঙ্গলবার, প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানায়, হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানতে কাজ করে যাচ্ছে তারা। ইউক্রেনে যুদ্ধ-সংঘাতে সবচেয়ে বেশি শিশু নিহত হয়েছে দেশটির দনেৎস্ক অঞ্চলে। সেখানে প্রাণ হারিয়েছে ১৯০ শিশু। এছাড়া, রাজধানী কিয়েভে ১১৬ এবং খারকিভে ১১২ শিশু নিহত হয়েছেন। এদিকে যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে ইউক্রেনে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের মানসিক সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দেশটির ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা। একই সাথে তিনি জানিয়েছেন, এজন্য একটি জাতীয় সহায়তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে কিয়েভ।