রবিবার, ০৪ Jun ২০২৩, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন
Menu

আওরঙ্গজেবকে নিয়ে যে কারণে উত্তপ্ত ভারতের রাজনীতি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ :  May 24, 202210:10 am

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মারা গেছেন তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় আগে। তবে তাকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভারত। আওরঙ্গজেবকে বলা হয় ভারতের ‘শেষ কার্যকর মুঘল সম্রাট’। ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ বছর শাসন করলেও, ইতিহাসবিদদের কাছে তিনি কখনোই খুব একটা জনপ্রিয় ছিলেন না। প্রথমত এর কারণ হলো, তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন নিজের বাবাকে বন্দি ও বড় ভাইকে হত্যা করে। আর অন্যান্য মুঘল শাসকদের তুলনায় তার খুব একটা সুনাম ছিল না।  আওরঙ্গজেবের প্রপিতামহ আকবরকে বলা হতো ধর্মনিরপেক্ষ ও সদয় শাসক, পিতামহ জাহাঙ্গীর পরিচিত ছিলেন শিল্প ও স্থাপত্যকলার প্রতি তার ভালোবাসার জন্য, আর পিতা শাহজাহান ছিলেন একজন রোম্যান্টিক ও তাজমহলের নির্মাতা। এদিকে ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, যাকে প্রায় সময়ই নির্দয় অত্যাচারী শাসক হিসেবে দেখা হতো। সাম্রাজ্য বিস্তারকারী আওরঙ্গজেব কঠোর শরিয়া আইন প্রচলন করেন এবং হিন্দু প্রজাদের জন্য বৈষম্যমূলক জিজিয়া কর ফিরিয়ে আনেন, যা তাদেরকে নিরাপত্তার জন্য প্রদান করতে হতো। তার সম্পর্কে আরও বলা হয়, তিনি সঙ্গীত এবং অন্যান্য শিল্পকলাকে ঘৃণা করতেন এবং তিনি বেশ কয়েকটি মন্দির ধ্বংস করে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সবকিছুই কয়েকশ’ বছর আগের ঘটনা হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নজিরবিহীন ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। আর এর শুরু হয় ভারতের জ্ঞানব্যাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর। বারানসি শহরের এই মসজিদটি একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মাণ করা হয়। ১৬৬৯ সালে বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করে সেখানে এই মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। এখন আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মর্যাদাহানিকর রেফারেন্স দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। এমনকি আদালতের নথিতেও এসব রেফারেন্স পাওয়া যাচ্ছে এবং এগুলো তুলে ধরছেন ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতারা। গত ডিসেম্বরে বারানসিতে দেয়া এক বক্তৃতায় ‘আওরঙ্গজেবের নৃশংসতা ও সন্ত্রাসের’ ব্যাপারে বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘আওরঙ্গজেব তরবারির সাহায্যে সভ্যতাকে পাল্টাতে চেয়েছিলেন। গোঁড়ামির মাধ্যমে তিনি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছেন।’ গত মাসে শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি আবারও এই মুঘল সম্রাটের নাম উল্লেখ করেন। ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করায় তেগ বাহাদুরের শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।মোদি বলেন, ‘যদিও আওরঙ্গজেব অনেকের মস্তক বিচ্ছিন্ন করেছেন, তিনি আমাদের বিশ্বাসে নাড়া দিতে পারেন নি।’ তার এ বক্তব্যে ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন কানাডীয়-আমেরিকান সাংবাদিক ডেভিড ফ্রুম। তিনশ’ বছর আগে মারা যাওয়া এক মুঘল সম্রাটকে আক্রমণ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কেন লম্বা বক্তৃতা দিচ্ছেন, এক টুইটবার্তায় তা জানতে চান ফ্রুম।