চকবাজারের ইমামগঞ্জ ১০ কাঠা সরকারি অর্পিত সম্পত্তি দখল করে ইরফান টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে হাজি সেলিমের মালিকাধীন মদিনা ডেভেলপারস। পুরনো ঢাকার সেই ভবনে চলছে দোকান বরাদ্দ দেয়াও। পুরো প্রক্রিয়াটিকে অবৈধ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। রাজধানীর পুরনো ঢাকার চকবাজার লাগোয়া ইমামগঞ্জের রায় ইশ্বর চন্দ্রশীল বাহাদুর স্ট্রিটের ১৬.৪৩ শতাংশ জমি ১৯৭২ সাল থেকেই অর্পিত সম্পত্তির তালিকায়। সরকারি সব রেকর্ডেই জমিটির মুল মালিক যতীন্দ্র কুমার দাস। যিনি ৪৭ এর দেশভাগের আগেই দেশ ছেড়ে যান এবং তাঁর বৈধ কোন ওয়ারিসও নেই। এলাকাবাসি জানান, এখানে একটি দোতলা ভবনে ছিলো সিটি ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। জেলা প্রশাসনের নথি বলছে সেই ভবনের দুটি তলা ৯০ দশক থেকেই লিজ নিয়েছিলেন পুরানো ঢাকার প্রয়াত শিল্পপতি দ্বীন মোহাম্মদ ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগম। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলো সেই লিজ। এর বাইরেও নাদিম আক্তার, ওয়াসিম আক্তার, আফসানা জামিন ঝুমা, নাফিসা রহমান রুবা ও মুশফিকুর রহমান শাকিলের নামে এই জমি লিজ দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন। যার কয়েকটি সাইন বোর্ড এখনও ঝুলছে। ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে সেই ভবনে ভাড়া নেয়া কয়েকটি দোকানের কর্মচারি ও মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা ভাড়া দেন আলী আহমেদ নামে এক ব্যক্তির কাছে, যিনি হাজি সেলিমের ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত। লিজ গ্রহীতাদের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের কোন অনুমতি ছাড়াই সেই ভবন ভেঙ্গে হাজি সেলিম মালিকাধীন ইরফান টাওয়ারের আয়তন বড় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও শ্রমিকরা সেখানে কাজ করেছে। ক্রয়সুত্রে জমির মালিক দাবিদার আতিকুল্লাকে কুড়ি বার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে তাদের আইনজীবীর দাবি আতিকুল্লাহ জমিটি ১৯৯৫ সালে মুল মালিক যতীন্দ্র কুমার দাসের ছেলেদের কাছ থেকে কিনেছিলেন। পরে ২০০৬ সালে তারা আদালতের রায়ও পেয়েছেন। এই আতিকুল্লাহ দ্বীন মোহাম্মদের প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা। অনুসন্ধানে জানা যায়, আতিকুল্লাহ ১৯৯৫ সালের একটি দলিল মুলে জমিটি কেনার দাবি করছেন। তিনি আবার দ্বীন মোহাম্মদকে এই জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করেন ২০০০ সালে। কিন্তু দ্বীন মোহাম্মদই ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলা প্রশাসনের লিজ গ্রহীতা ছিলেন। বিভিন্ন সময় তিনি জেলা প্রশাসনকে খাজনাও দিয়েছেন উক্ত দ্বীন মোহাম্মদ। জমিটি ক্রয় বিক্রয়ের পুরো বিষয়টিকেই ভাওতাবাজি বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক। এলাকাবাসি বলছে, বিভিন্ন লোকের নামে লিজ করিয়ে জায়গাটি মূলত হাজি সেলিমই দখলে রাখেন। আদালতের মাধ্যমে অর্পিত সম্পতির তালিকা থেকে নাম না সরিয়ে এখন সেখানে ভবন নির্মান ও দোকান বরাদ্দ দেয়া চলছে। এ বিষয়ে কথা বলতে হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে কয়েক বার ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। এর বাইরেও রাষ্ট্রপতির দেয়া বধির ও বাক প্রতিবন্ধীদের স্কুলের এক একর সম্পত্তি দখলের অভিযোগও আছে হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে। দুই বছর আগে সে বিষয়ে প্রতিবেদন করেছিলো দেশের নামকরা একটি টেলিভিশন। ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতির দেয়া মূক ও বধির স্কুলের জন্য সেই একর জমি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। যদিও ২০২০ সালে গণমাধ্যমে ঢাকা জেলা প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিলেন স্কুলের সেই জমি ফিরে পেতে তারা কার্যকরি পদক্ষেপ নেবন, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অর্পিত সম্পত্তি দখলকরে হাজি সেলিম বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন
প্রকাশ : June 4, 20227:57 am
